বাজরিগার পাখি পালন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা

বাজরিগার পাখি পালন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা

পোষা প্রাণী মানুষের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে বাজরিগার (Budgerigar) সবচেয়ে জনপ্রিয় রঙিন পাখিগুলোর একটি। সহজে খাপ খাওয়ানো, মিষ্টি ডাক এবং প্রজননের সুবিধার কারণে বাজরিগার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অনেক বেশি পালন করা হয়। শখের পাশাপাশি ছোট ব্যবসা হিসেবে বাজরিগার পালন অনেকেই শুরু করেছেন। এই পোস্টে বাজরিগার পাখি পালনের সম্পূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো।


🕊️ বাজরিগার পাখির পরিচিতি

  • উৎপত্তি: অস্ট্রেলিয়া
  • আয়ুষ্কাল: সঠিক যত্নে ১০-১২ বছর
  • স্বভাব: চঞ্চল, সামাজিক, দ্রুত শিখতে পারে
  • প্রজনন ক্ষমতা: বছরে একাধিকবার ডিম দেয়

🏠 খাঁচা ও পরিবেশ

বাজরিগার পালনের প্রথম শর্ত হলো সঠিক খাঁচা।

  • আকার: ১ জোড়া বাজরিগারের জন্য ন্যূনতম ২৪×১৮×১৮ ইঞ্চি খাঁচা।
  • বার স্পেসিং: তারের ফাঁকা অংশ ১ সেন্টিমিটারের বেশি না হওয়া জরুরি।
  • অবস্থান: হাওয়াযুক্ত কিন্তু সরাসরি রোদ বা ঠাণ্ডা বাতাসমুক্ত জায়গায় রাখতে হবে।
  • সাজসজ্জা: কাঠের ডান্ডা, দোলনা, ছোট খেলনা ও বসার জায়গা রাখলে তারা সুখী থাকে।
  • পরিচ্ছন্নতা: সপ্তাহে অন্তত ২ বার খাঁচা পরিষ্কার করতে হবে।

🍃 খাবার ও পুষ্টি

সুস্থ ও সক্রিয় বাজরিগারের জন্য সুষম খাদ্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

  • শস্যদানা: মিলেট, ক্যানারি সিড, ওটস, কর্ন, সানফ্লাওয়ার সিড।
  • সবজি: গাজর, পালং শাক, ব্রকলি, লাউ, শিম।
  • ফল: আপেল, পেয়ারা, কলা, কমলা। (বীজ ফেলে দিতে হবে)
  • পানি: প্রতিদিন টাটকা পানি দিতে হবে, গরমকালে দিনে দুইবার পরিবর্তন করা উত্তম।
  • সাপ্লিমেন্ট: ক্যালসিয়াম ব্লক, কটলবোন (Cuttle bone) ও মিনারেল ব্লক দেওয়া উচিত।

🩺 স্বাস্থ্য পরিচর্যা

  • অসুস্থতার লক্ষণ: খাওয়া কমে যাওয়া, ফুলে বসে থাকা, লেজ কাঁপা, অস্বাভাবিক শব্দ করা।
  • চিকিৎসা: এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ভেটেরিনারির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
  • গোসল: খাঁচায় পানির বাটি দিলে তারা নিজেরাই গোসল করবে।
  • ঘুম: দিনে ১০-১২ ঘণ্টা ঘুম দরকার। রাতে খাঁচা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো।

🥚 বাজরিগার প্রজনন পদ্ধতি

  • প্রজনন শুরু: জোড়ার বয়স ৮-১০ মাস হলে প্রজননের উপযুক্ত।
  • নেস্ট বক্স: কাঠের তৈরি ১০×৬×৬ ইঞ্চি আকারের নেস্ট বক্স খাঁচায় রাখতে হবে।
  • ডিম: সাধারণত ৪-৬টি ডিম দেয়।
  • ইনকিউবেশন: ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে ১৮-২১ দিন লাগে।
  • বাচ্চার যত্ন: শুরুতে মা খাওয়ায়, পরে ৩০-৩৫ দিনে তারা স্বাবলম্বী হয়।

👨‍👩‍👧 আচরণ ও সামাজিকতা

  • বাজরিগার খুব সামাজিক পাখি, তাই একা না রেখে অন্তত এক জোড়া রাখা উচিত।
  • নিয়মিত কথা বললে মানুষের শব্দ নকল করতে শেখে।
  • তারা খেলার সময় খাঁচার বাইরে উড়তেও পছন্দ করে, তবে নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দিতে হবে।

💰 ব্যবসায়িকভাবে বাজরিগার পালন

বাংলাদেশে বাজরিগার পালন করে অনেকে ব্যবসা করছেন।

  • প্রজনন হার: একটি সুস্থ জোড়া থেকে বছরে ৩-৪ বার বাচ্চা পাওয়া যায়।
  • মূল্য: প্রজাতি ও রঙ অনুযায়ী প্রতিটি বাচ্চার দাম ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • সম্ভাবনা: কম খরচে পালন করা যায় বলে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করে বড় ফার্ম গড়ে তোলা সম্ভব।

সঠিক যত্ন, খাবার ও পরিবেশ নিশ্চিত করলে বাজরিগার একটি আনন্দদায়ক ও লাভজনক পোষা প্রাণী হতে পারে। শখের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই নতুনরা চাইলে খুব সহজেই বাজরিগার পালন শুরু করতে পারেন।