বাংলাদেশ, নদী আর সবুজে ঘেরা এক অপার সৌন্দর্যের দেশ। কিন্তু এর সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছড়িয়ে আছে এর প্রতিটি জেলার বৈচিত্র্যময় স্বাদের খাবারেও। প্রতিটি জেলার নিজস্ব কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, যা সেই অঞ্চলের সংস্কৃতি আর মানুষের পরিচয় বহন করে।
আজ আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত সব খাবারের এক অসাধারণ স্বাদের ভ্রমণে। আপনি যদি ভোজনরসিক হন, তাহলে এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য! চলুন, শুরু করা যাক! 🚀
ঢাকা বিভাগ: ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল 🏙️
১. ঢাকা
কাচ্চি বিরিয়ানি
পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত খাবার। এটি মোগল আমলের প্রভাবিত, যেখানে মেরিনেট করা মাংস ও সুগন্ধি চাল একসাথে রান্না করা হয়। কাচ্চি বিরিয়ানি শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সংস্কৃতির প্রতীক। প্রতি লেয়ারেই মাংস ও চালের স্বাদ একত্রিত হয়ে একটি অনন্য স্বাদ সৃষ্টি করে। এখানে ব্যবহৃত মশলা, কষানো মাংস এবং ঘ্রাণযুক্ত চালের সমন্বয় এই বিরিয়ানিকে অন্য বিরিয়ানির থেকে আলাদা করে তোলে। এটি সাধারণত উৎসব, বিবাহ বা বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
বাকরখানি
ঢাকার বাকরখানি হলো মিষ্টি বা নানার মতো মসৃণ পাউরুটি, যা মূলত চায়ের সঙ্গে খাওয়ার জন্য জনপ্রিয়। এটি ঘন দুধ, চিনি এবং ঘি দিয়ে তৈরি হয়, যা চিবিয়ে খাওয়ার সময় বিশেষ মধুরতা দেয়। বাকরখানি শুধু খাবার নয়, এটি ঢাকার পুরনো ঐতিহ্য ও মিষ্টি সংস্কৃতির অংশ।
মোরগ পোলাও
মোরগ পোলাও হলো ঢাকার বিশেষ ভোজ্য খাবার, যা সাধারণত উৎসব বা অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবেশন করা হয়। সুগন্ধি চাল ও মসলা যুক্ত মুরগি দিয়ে তৈরি এই পোলাও প্রতিটি মুখের স্বাদকে মুগ্ধ করে।
২. গাজীপুর
কাঁঠাল
গাজীপুরের কাঁঠাল তার মিষ্টি ও সুস্বাদুর জন্য বিখ্যাত। পাকা কাঁঠালের নরম টেক্সচার এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন তরকারি ও ভর্তা বানানো হয়, যা স্থানীয়দের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অংশ। এছাড়াও উৎসবের সময় পাকা কাঁঠাল অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয়।
৩. নারায়ণগঞ্জ
তিলের খাজা
নারায়ণগঞ্জের তিলের খাজা হলো এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। এটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তিল, চিনি এবং দুধ। খাজার স্বাদ মিষ্টি, হালকা খসখসে এবং মসৃণ। এটি সাধারণত উৎসব বা অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয়। খাজার প্রতিটি টুকরোতে ঐতিহ্য এবং ঐ জেলার মিষ্টি সংস্কৃতির ছাপ দেখা যায়।
৪. মুন্সিগঞ্জ
ভাগ্যকুলের মিষ্টি
মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকুলের মিষ্টি দেশের অন্যান্য মিষ্টির মতোই জনপ্রিয়, তবে এর স্বাদ ভিন্ন। এটি চিনি, দুধ এবং গুঁড়া মিষ্টি দিয়ে তৈরি হয়। প্রতিটি খাওয়ার সময় মিষ্টির নরম টেক্সচার এবং হালকা সুগন্ধ ভোজনরসিকদের আনন্দ দেয়।
৫. নরসিংদী
সাগর কলা
নরসিংদীর সাগর কলা হলো একটি বিশেষ ধরনের কলা, যা কাঁচা ও পাকা দুইভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় এটি তরকারি ও ভর্তার জন্য ব্যবহার হয়, আর পাকা হলে খাওয়ার সময় প্রাকৃতিক মিষ্টি ও নরম টেক্সচার পাওয়া যায়।
৬. মানিকগঞ্জ
ক্ষীর মোহন
মানিকগঞ্জের ক্ষীর মোহন হলো দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি, যা ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবেশিত হয়। এর নরম টেক্সচার ও হালকা মিষ্টি স্বাদ বিশেষ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
৭. ফরিদপুর
মিষ্টি খেজুর গুড়
ফরিদপুরের মিষ্টি খেজুর গুড় খেজুর থেকে তৈরি হয়। এর স্বাদ মিষ্টি ও প্রাকৃতিক, যা পিঠা, মিষ্টি এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়। খেজুর গুড় শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি ফরিদপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ।
৮. গোপালগঞ্জ
বালিশ মিষ্টি
গোপালগঞ্জের বালিশ মিষ্টি হলো সুস্বাদু ও নরম মিষ্টি, যা মিষ্টি প্রেমীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এটি দুধ, চিনি ও ঘি দিয়ে তৈরি হয় এবং উৎসব বা অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
রসগোল্লা
রসগোল্লা হলো দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি নরম ও রসালো মিষ্টি। গোপালগঞ্জের রসগোল্লার স্বাদ অন্য জেলার রসগোল্লার তুলনায় ভিন্ন, কারণ এটি বিশেষ দুধের স্বাদ ও স্থানীয় প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
৯. মাদারীপুর
খেজুর গুড়
মাদারীপুরের খেজুর গুড় প্রাকৃতিক মিষ্টি এবং সুগন্ধি দিয়ে সমৃদ্ধ। এটি পিঠা, মিষ্টি এবং বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় লোকজন এই গুড়কে দৈনন্দিন রান্না ও উৎসব উভয়ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে। খেজুর গুড় শুধু স্বাদে নয়, এটি ঐ এলাকার কৃষি ঐতিহ্য ও মানুষের পরিশ্রমের গল্পও বহন করে।
১০. শরীয়তপুর
মহিষের দই
শরীয়তপুরের মহিষের দই বিশেষভাবে সুগন্ধি এবং ক্রিমযুক্ত। এটি কাঁচা দুধ থেকে তৈরি হয় এবং সাধারণ দইয়ের তুলনায় ঘন ও নরম হয়। উৎসব বা অতিথি আপ্যায়নে এটি প্রধান আকর্ষণ। স্থানীয়রাও দৈনন্দিনভাবে সকালের নাস্তায় এটি খেতে পছন্দ করে। মহিষের দই এর মসৃণতা এবং স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
১১. টাঙ্গাইল
পোড়াবাড়ীর চমচম
টাঙ্গাইলের চমচম ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, যা দুধ, চিনি এবং ঘি দিয়ে তৈরি হয়। এটি ছোট ছোট বৃত্তাকার মিষ্টি, যা খেতে নরম ও মিষ্টি। উৎসব বা বিবাহের অনুষ্ঠানে এটি বিশেষভাবে পরিবেশন করা হয়। টাঙ্গাইলের চমচম অন্যান্য এলাকার চমচমের থেকে ভিন্ন কারণ এর স্বাদ ও টেক্সচারে স্থানীয় বিশেষত্ব থাকে।
১২. কিশোরগঞ্জ
বালিশ মিষ্টি ও নকশি পিঠা
কিশোরগঞ্জের বালিশ মিষ্টি ও নকশি পিঠা নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং স্থানীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
১৩. রাজবাড়ী
চমচম ও খেজুর গুড়
রাজবাড়ীর চমচম হলো নরম মিষ্টি, খেজুর গুড় মিষ্টি এবং ঘন। এটি উৎসব ও অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশন করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগ: পাহাড়ি আর সামুদ্রিক স্বাদের সমাহার 🏞️
১৪. চট্টগ্রাম
মেজবানি মাংস
চট্টগ্রামের মেজবানি মাংস হলো ভোজ্য খাবারের একটি অনন্য ধরন। এটি বিশেষ ধরনের মাংস, মশলা এবং ভাজা পদ্ধতিতে তৈরি হয়। মেজবানি মূলত অনুষ্ঠান ও উৎসবে পরিবেশিত হয় এবং খেতে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায়। মাংসের রস ও মশলার সমন্বয় একে বিশেষ করে।
কালা ভুনা
চট্টগ্রামের কালা ভুনা মাংসের এক প্রথাগত পদ, যেখানে মসলা, মরিচ এবং ঘি দিয়ে মাংস ভাজা হয়। এটি স্থানীয়দের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
১৫. কক্সবাজার
শুঁটকি মাছ
কক্সবাজারের শুঁটকি মাছ স্থানীয়রা শুকিয়ে সংরক্ষণ করে এবং রান্নায় ব্যবহার করে। শুঁটকির স্বাদ ভিন্ন ও শক্তিশালী। এটি বিশেষ করে তেল, মশলা ও লবণ দিয়ে রান্না করা হয়। পর্যটকরা কক্সবাজারে এই খাবার অবশ্যই খেয়ে যান।
মিষ্টি পানা
কক্সবাজারের মিষ্টি পানা স্থানীয় মিষ্টি, যা পানের পাতায় চিনি ও নারকেল মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। এটি হালকা ও সুগন্ধযুক্ত।
১৬. বান্দরবান
হিল জুস
বান্দরবানের হিল জুস হলো পাহাড়ি ফলের রস, যা তাজা এবং প্রাকৃতিক। এটি প্রচলিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য এবং পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়।
তামাক
বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী তামাক স্থানীয়দের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য। এটি বিশেষভাবে মশলা ও ধোঁয়ার স্বাদ যুক্ত।
১৭. রাঙ্গামাটি
বাঁশ কোড়ল
রাঙ্গামাটির বাঁশ কোড়ল হলো পাহাড়ি অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার। বাঁশের ছোট ছোট অংশ এবং মাংস বা সবজি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এর স্বাদ স্থানীয় বিশেষত্ব বহন করে।
১৮. খাগড়াছড়ি
হলুদ
খাগড়াছড়ির হলুদ প্রধান খাদ্য মসলা। এটি স্থানীয়ভাবে চাষ ও শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এর স্বাদ এবং গন্ধ বিশেষ।
১৯. কুমিল্লা
রসমালাই
কুমিল্লার রসমালাই হলো দুধের মিষ্টি। ছোট ছোট দুধের বলগুলোর সাথে চিনি ও দুধের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়। স্বাদে নরম ও মধুর, যা ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
২০. ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছানামুখী মিষ্টি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি দুধ এবং ছানার সংমিশ্রণে তৈরি হয়। এটি নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং উৎসবের সময় অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয়।
২১. চাঁদপুর
ইলিশ মাছ 🐟
চাঁদপুরের ইলিশ মাছ দেশের অন্যতম বিখ্যাত মাছ। এটি ভাজা, ভাপা বা কারিতে রান্না করা হয়। ইলিশ মাছের স্বাদ, তেলাক্ততা এবং স্বাদ ভোজনরসিকদের মন জয় করে।
২২. নোয়াখালী
নারকেলের নাড়ু
নোয়াখালীর নারকেলের নাড়ু হলো নারকেল, চিনি এবং দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি। এটি ছোট ছোট গোলাকৃতির এবং খেতে নরম। বিশেষ করে উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলোতে এটি অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশন করা হয়।
মহিষের দই
মহিষের দই হলো ক্রিমযুক্ত, সুগন্ধি এবং নরম। নোয়াখালীর মানুষ দৈনন্দিনভাবে সকালের নাস্তায় এটি খেতে পছন্দ করে।
২৩. ফেনী
মহিষের দই (মৈষা দই)
ফেনীর মহিষের দই, স্থানীয়ভাবে যাকে মৈষা দই বলা হয়, দুধ এবং মহিষের দুধ থেকে তৈরি হয়। এটি ঘন, ক্রিমযুক্ত এবং নরম। খেতে স্বাদে অনন্য এবং স্থানীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ। দইয়ের মিষ্টি স্বাদ এবং নরম টেক্সচার ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
২৪. লক্ষ্মীপুর
নারকেলের নাড়ু
লক্ষ্মীপুরের নারকেলের নাড়ু হলো ছোট ছোট গোলাকৃতির মিষ্টি। এটি চিনি এবং নারকেল দিয়ে তৈরি। খেতে নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং উৎসবের সময় অতিথি আপ্যায়নের জন্য আদর্শ। প্রতিটি টুকরোতে স্থানীয় ঐতিহ্য ও স্বাদ দেখা যায়।
রাজশাহী বিভাগ: আম আর মিষ্টির রাজ্য 🥭
২৫. রাজশাহী
হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলি আম
রাজশাহীর হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলি আম বিশ্বখ্যাত। এই আমগুলো স্বাদে মিষ্টি, রসালো এবং সুগন্ধি। এগুলো কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় বা বিভিন্ন মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। রাজশাহীর এই আম শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি জেলার পরিচয় ও ঐতিহ্যও বহন করে।
২৬. চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম সুস্বাদু ও রসালো। স্থানীয়ভাবে চাষ করা এই আমের স্বাদ ভিন্ন এবং এটি পাকা অবস্থায় খুবই মিষ্টি। পাকা আম সাধারণত সরাসরি খাওয়া হয় বা আচার, জেলি ও অন্যান্য মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয়।
২৭. নাটোর
কাঁচাগোল্লা
নাটোরের কাঁচাগোল্লা হলো দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি। এটি নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং ভোজনরসিকদের মন জয় করে। উৎসব ও অনুষ্ঠানে এটি বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়।
২৮. নওগাঁ
প্যারা সন্দেশ
নওগাঁর প্যারা সন্দেশ দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু মিষ্টি। ছোট ছোট আকারে কাটা হয় এবং হালকা মিষ্টি স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
২৯. পাবনা
প্যারা সন্দেশ ও বনলতা কাঁচাগোল্লা
পাবনার প্যারা সন্দেশ ও বনলতা কাঁচাগোল্লা স্থানীয় মিষ্টি। সন্দেশ নরম ও সুগন্ধযুক্ত, কাঁচাগোল্লা ঘন ও মিষ্টি। বিশেষ অনুষ্ঠান ও উৎসবে এটি অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশন করা হয়।
৩০. সিরাজগঞ্জ
পানিতরই মিষ্টি
সিরাজগঞ্জের পানিতরই মিষ্টি দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হয়। খেতে নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে। এটি স্থানীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে খুবই জনপ্রিয়।
৩১. বগুড়া
বগুড়ার দই
বগুড়ার দই খ্যাতি দেশজুড়ে। এটি দুধ থেকে তৈরি হয়, ঘন ও ক্রিমযুক্ত। খেতে মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং স্থানীয় উৎসব ও দৈনন্দিন খাবারে ব্যবহার হয়।
৩২. জয়পুরহাট
ছানার সন্দেশ
জয়পুরহাটের ছানার সন্দেশ হলো দুধ ও ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি। এটি নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং উৎসব বা অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশন করা হয়।
খুলনা বিভাগ: চুইঝাল আর গলদা চিংড়ির স্বাদ 🌶️
৩৩. খুলনা
চুইঝাল
খুলনার চুইঝাল হলো এক ধরনের মশলা যা মাংস রান্নায় ব্যবহার হয়। এটি মাংসের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্থানীয় খাবারের স্বাদকে অনন্য করে তোলে।
গলদা চিংড়ি
খুলনার গলদা চিংড়ি মিষ্টি, টানটান এবং সুগন্ধযুক্ত। এটি সাধারণত ভর্তা, তরকারি বা ভাজা আকারে খাওয়া হয়।
৩৪. যশোর
জামতলার মিষ্টি
যশোরের জামতলার মিষ্টি হলো দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি নরম মিষ্টি। এটি উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলোতে জনপ্রিয়।
খেজুর গুড় ও খই
খেজুর গুড়ের মিষ্টি স্বাদ এবং খইয়ের খসখসে টেক্সচার ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
৩৫. বাগেরহাট
সেয়াই পিঠা
বাগেরহাটের সেয়াই পিঠা হলো চিনি, দুধ ও গুঁড়া দিয়ে তৈরি নরম পিঠা। এটি হালকা মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত।
হাঁসের মাংস
হাঁসের মাংস বাগেরহাটে খুবই জনপ্রিয়। মসলা এবং ঘি দিয়ে রান্না করা হলে এর স্বাদ আরও বৃদ্ধি পায়।
৩৬. সাতক্ষীরা
সন্দেশ
সাতক্ষীরার সন্দেশ দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি। এটি নরম ও সুগন্ধযুক্ত। উৎসব বা অনুষ্ঠানে এটি বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়।
৩৭. চুয়াডাঙ্গা
তিলের খাজা
চুয়াডাঙ্গার তিলের খাজা তিল ও চিনি দিয়ে তৈরি। এটি হালকা খসখসে এবং মিষ্টি স্বাদের।
৩৮. মেহেরপুর
মিষ্টি
মেহেরপুরের মিষ্টি সুস্বাদু এবং নরম। এটি উৎসব এবং অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশিত হয়।
৩৯. নড়াইল
খেজুর গুড়
নড়াইলের খেজুর গুড় মিষ্টি, ঘন এবং প্রাকৃতিক। এটি পিঠা ও অন্যান্য মিষ্টিতে ব্যবহার হয়।
৪০. ঝিনাইদহ
শিউলী মিষ্টি
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর শিউলী মিষ্টি দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি নরম মিষ্টি। খেতে সুগন্ধযুক্ত এবং উৎসবের জন্য উপযুক্ত।
৪১. মাগুরা
মিষ্টি
মাগুরার মিষ্টি নরম এবং মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এটি উৎসব এবং অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিচিত।
৪২. কুষ্টিয়া
তিলের খাজা ও তালের পিঠা
কুষ্টিয়ার তিলের খাজা এবং তালের পিঠা সুস্বাদু। খাজা হালকা খসখসে এবং মিষ্টি। পিঠা নরম এবং সুগন্ধযুক্ত।
সিলেট বিভাগ: চায়ের দেশ, কমলা আর সাতকড়ার স্বাদ 🍊
৪৩. সিলেট
চা
সিলেটের চা শুধু পানীয় নয়, এটি এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অংশ। স্থানীয় চা বাগান থেকে সংগ্রহ করা চা পাতাগুলো সুগন্ধি, স্বাদে সমৃদ্ধ এবং তাজা। প্রতিদিন সকাল বা বিকেলে চা খাওয়ার রেওয়াজ এখানে খুবই জনপ্রিয়। চা বানানোর প্রথাগত পদ্ধতি এবং এর ঘ্রাণ ভোজনরসিকদের মন জয় করে।
কমলা
সিলেটের কমলা হলো রসালো এবং মিষ্টি স্বাদের। এটি স্থানীয়ভাবে চাষ করা হয় এবং সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি জুস, আচার ও মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। কমলার মিষ্টি, হালকা টক স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
সাতকড়ার আচারের স্বাদ
সিলেটের সাতকড়া হলো এক প্রকার টক ফল, যা সাধারণত মাংসের সঙ্গে রান্না করা হয়। এর স্বাদ ভিন্ন, ঘ্রাণ প্রখর এবং স্থানীয়দের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
৪৪. মৌলভীবাজার
চা
মৌলভীবাজারের চা বাগান পৃথিবীর বিখ্যাত। এখানকার চা পাতার স্বাদ মিষ্টি এবং ঘ্রাণযুক্ত। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা চা পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চা, যা চায়ের উৎসব এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়।
আনারস
মৌলভীবাজারের আনারস রসালো ও মিষ্টি। এটি সরাসরি খাওয়া হয় বা জুস, ডেজার্ট ও অন্যান্য মিষ্টিতে ব্যবহার হয়। আনারসের প্রাকৃতিক সুগন্ধ ভোজনরসিকদের আকৃষ্ট করে।
৪৫. হবিগঞ্জ
রাবার
হবিগঞ্জের রাবার হলো স্থানীয় কৃষি পণ্য। এটি মিষ্টি নয়, তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চা
হবিগঞ্জের চা সুগন্ধযুক্ত এবং প্রাকৃতিক। স্থানীয় চা বাগান থেকে সংগ্রহ করা পাতার স্বাদ অন্য অঞ্চলের চায়ের তুলনায় ভিন্ন।
আনারস
হবিগঞ্জের আনারস সুস্বাদু ও রসালো। এটি খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মিষ্টি ও জুস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৪৬. সুনামগঞ্জ
মাছ
সুনামগঞ্জের মাছ খ্যাত। এখানকার বিভিন্ন নদী ও জলাশয় থেকে আহরিত মাছের স্বাদ অনন্য। মাংসের নরম টেক্সচার, ঘ্রাণ এবং রসালো স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
বরিশাল বিভাগ: পেয়ারা আর আমড়ার দেশ 🍐
৪৭. বরিশাল
আমড়া
বরিশালের আমড়া প্রাকৃতিক টক-মিষ্টি স্বাদের। এটি সরাসরি খাওয়া হয় বা আচার ও বিভিন্ন মিষ্টিতে ব্যবহার হয়। আমড়ার ঘ্রাণ ও স্বাদ স্থানীয়দের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
৪৮. পটুয়াখালী
মহিষের দই
পটুয়াখালীর মহিষের দই ঘন, ক্রিমযুক্ত এবং সুগন্ধযুক্ত। এটি উৎসব ও অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে পরিবেশন করা হয়। দইয়ের মিষ্টি ও নরম স্বাদ ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করে।
৪৯. ভোলা
মহিষের দই
ভোলার মহিষের দই সুগন্ধযুক্ত এবং নরম। স্থানীয়রা এটি দৈনন্দিন খাবারে এবং উৎসবের সময় খেতে পছন্দ করে।
৫০. পিরোজপুর
পেয়ারার স্বাদ
পিরোজপুরের পেয়ারার স্বাদ মিষ্টি, রসালো এবং সুগন্ধযুক্ত। এটি সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি আচার, জেলি এবং মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাজারে পাওয়া ভাসমান পেয়ারা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
৫১. ঝালকাঠি
আটা ও লবণ
ঝালকাঠির আটা স্থানীয়ভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এটি ময়দা তৈরি বা স্থানীয় খাবারে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় লবণও এই অঞ্চলের রান্নার স্বাদ বাড়ায়।
৫২. বরগুনা
চুইয়া পিঠা ও চেবা পিঠা
বরগুনার চুইয়া পিঠা নরম, মিষ্টি এবং সুগন্ধযুক্ত। চেবা পিঠা ছোট ছোট আকারে তৈরি হয় এবং উৎসব বা অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবেশন করা হয়।
রংপুর বিভাগ: তামাক, লিচু আর রসমঞ্জরীর স্বাদ 🌾
৫৩. রংপুর
তামাক ও আখ
রংপুরের তামাক ও আখ মূলত কৃষি পণ্য, তবে এদের ব্যবহার স্থানীয় মিষ্টি ও চা তৈরি এবং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫৪. কুড়িগ্রাম
চিলমারীর শুঁটকি
কুড়িগ্রামের চিলমারীর শুঁটকি মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মশলা ও লবণ দিয়ে রান্না করা হয় এবং স্থানীয়রা উৎসবে বা দৈনন্দিন খাদ্যে খেতে পছন্দ করে।
৫৫. গাইবান্ধা
রসমঞ্জরী
গাইবান্ধার রসমঞ্জরী দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি। এটি নরম ও সুগন্ধযুক্ত। উৎসব বা অনুষ্ঠানগুলোতে এটি বিশেষভাবে পরিবেশন করা হয়।
৫৬. নীলফামারী
ডোমারের ডিম
নীলফামারীর ডোমারের ডিম স্থানীয় প্রজাতির ডিম। এটি ভাজা, রান্না বা মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয়।
৫৭. লালমনিরহাট
সিদল ভর্তা ও হাড়িভাঙ্গা আম
লালমনিরহাটের সিদল ভর্তা হলো টক স্বাদের ভর্তা। হাড়িভাঙ্গা আম রসালো এবং মিষ্টি।
৫৮. দিনাজপুর
কাটারিভোগ চাল ও লিচু
দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল সুগন্ধযুক্ত। লিচু রসালো, মিষ্টি এবং উৎসবের সময় জনপ্রিয়।
৫৯. পঞ্চগড়
সিদল, পেলকা ও ছেকা
পঞ্চগড়ের সিদল হলো টক ফল, পেলকা মিষ্টি এবং ছেকা স্থানীয় খাবারের অংশ।
৬০. ঠাকুরগাঁও
সুস্বাদু চাল
ঠাকুরগাঁওর চাল নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং স্থানীয় রান্নার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ময়মনসিংহ বিভাগ: মুক্তাগাছার মণ্ডা আর ছানার পায়েসের স্বাদ 🍚
৬১. ময়মনসিংহ
মুক্তাগাছার মণ্ডা
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডা দুধ, চিনি এবং ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ায় তৈরি। GI পণ্য হিসেবে স্বীকৃত।
৬২. জামালপুর
ছানার পোলাও ও ছানার পায়েস
জামালপুরের ছানার পোলাও এবং ছানার পায়েস নরম, সুগন্ধযুক্ত এবং উৎসব বা অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
৬৩. শেরপুর
ছানার পায়েস ও ছানার পোলাও
শেরপুরের ছানার পায়েস এবং ছানার পোলাও দুধ, চিনি এবং ছানা দিয়ে তৈরি। এটি নরম এবং সুগন্ধযুক্ত।
৬৪. নেত্রকোনা
বালিশ মিষ্টি
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি নরম ও সুগন্ধযুক্ত। এটি উৎসব বা অনুষ্ঠানগুলোতে জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা তার নিজস্ব স্বাদে সমৃদ্ধ। এই ব্লগ পোস্টটি আমাদের দেশের খাবারের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা। আপনি যখনই কোনো জেলায় ভ্রমণে যাবেন, সেই অঞ্চলের বিখ্যাত খাবারগুলো চেখে দেখতে ভুলবেন না। এটি আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলবে। 😋✈️








